প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি সমগ্র বাঙালি জাতিকে উৎসর্গ করে বলেছেন, এ সম্মান শুধু আমার নয়, সব বাঙালির।
আজ শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষ সমাবর্তনে এ ডিগ্রী গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
ডিগ্রী গ্রহণের পর বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্য আজকের দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ কবি নজরুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে ডিলিট প্রদান করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় সম্মানের। এ সম্মান শুধু আমার নয়, সব বাঙালির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি কাজী নজরুল শুধু বাংলাদেশের কবি নন। তিনি দুই দেশেরই কবি। এর আগে সকালে কলকাতা থেকে বিমানে করে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে দুর্গাপুরে পৌছান প্রধানমন্ত্রী।
দুর্গাপুর থেকে সড়কপথে দুপুরে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি। এরপর শুরু হয় বিশেষ সমাবর্তন ও ডিলিট প্রদান অনুষ্ঠান।
বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়ায়। কবির ১১৯তম জন্মজয়ন্তীতে এখন মেতে ছিলেন চুরুলিয়ার মানুষ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি তাঁদের কাছে যেন বড় উপহার হয়ে দেখা দেয়। চুরুলিয়াবাসী চেয়েছিলেন হাসিনা বিদ্রোহী কবির জন্মভিটেয় আসুক একবার। তাইতো আসনসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর এই প্রথম কোনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা আসানসোলবাসী।
এদিকে, ভাগাডড়ের মরা পশুর মাংসের কথা ফাঁসের পর তার ছায়া এবার আসানসোলের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও পড়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মাংস। মাংস নিয়ে তৈরি হওয়া অবিশ্বাসের কারণেই এই সিদ্ধান্ত। দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পৌছনোর পরেই তাঁকে ডাবের জল ও রোস্টেড ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে স্বাগত জানান হয়। এরপর মধ্যাহ্ন ভোজে ছিল ভাত, ডাল, আলুভাজা, চিংড়ির কাটলেট, ডাব চিংড়ি, ভেটকি পাতুরি, বড়ি দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল। সেই সঙ্গে বর্ধমানের মাখা সন্দেশ, সীতাভোগ, মিহিদানা, রাবড়ি, জিলপি উপহার দেওয়া হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
তবে রমজান মাস চলছে। সেকথা খেয়াল রেখেই খাদ্য তালিকায় ফল, পানীয় এবং ড্রাই ফ্রুটসও ছিল।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে দুই দিনের ভারত সফরে ভারত যান শেখ হাসিনা।
সফরের প্রথম দিন শুক্রবার সকালে শান্তিনিকেতন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমাবর্তনে অংশ নেন এবং সেখানে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।
গতকাল বিকালেই কলকাতায় ফিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা, হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং রাতে পশ্চিমবঙ্গের গভর্নরের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
শনিবার আসানসোল থেকে কলকাতায় ফিরে নেতাজী জাদুঘর পরিদর্শন এবং স্থানীয় সাংসদদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর রাতেই ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।