হায় জীবন! অনাদরে, অবহেলায় সবুজ-সতেজ জীবন শুকিয়ে যায়। একটা সময় কত লোকজনের সঙ্গে জমিয়ে দিন কেটেছে তার। ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশন, দিনরাত শুটিংয়ে মেতেছেন দিনের পর দিন। অভিনেত্রী বলেই হয়তো অনেক আত্মীয় স্বজনের কাছে বাড়তি আগ্রহের প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি। সেই তাজিন আহমেদকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো পরিবার-স্বজনদের মুখ না দেখেই!
আজ মঙ্গলবার (২২ মে) দুপুর ১২টায় তাজিন আহমেদের হার্ট অ্যাটাক হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এক মেকাপ আর্টিস্ট। তাজিনের সঙ্গেই থাকতেন তিনি উত্তরার বাসায়। উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। এরপর বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে মারা যান এই অভিনেত্রী। তার বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর।
জাগো নিউজকে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। মৃত্যুর খবর জানানোর পাশাপাশি দুঃখ করে নাসিম জানালেন, ‘খারাপ লাগলো এই ভেবে যে মৃত্যুর সময় তাজিনের পরিবারের কেউ ছিলেন না পাশে। এখন পর্যন্ত তাজিনের পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। হাসপাতালে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখা হবে। ইফতারের পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কখন, কোথায় জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।’
এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। গত বছর ববি হাজ্জাজের নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে’ (এনডিএম) যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। পেয়েছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সম্পাদক (সাংস্কৃতিক) পদ।
তার কর্মজীবন সম্পর্কে সবার কমবেশি জানা আছে। কিন্তু পরিবার পরিজন কোথায় তার? খোঁজ নিয়ে খুব বেশি তথ্য উদ্ধার করা গেল না। জানা গেল, তাজিন আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালী। তবে ছোটবেলায় বাবাকে হারানোয় পাবনায় নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন তিনি। এরপর কৈশোরে চলে আসেন ঢাকায়। মায়ের পৈতৃক বাড়ি ছিল আদাবরে। সেখানেই মানুষ হতে থাকেন। পড়াশোনা করেছেন ইডেন মহিলা কলেজে। ম্যানেজম্যান্টে মাস্টার্স করেছেন তিনি।
পড়ালেখা শেষে শখের বশে শুরু করেন অভিনয়। করেছেন সাংবাদিকতাও। নাটক লিখেছেন টেলিভিশনে। উপস্থাপনাও করেছেন তিনি। একটা সময় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে যোগ দিয়েছেন মঞ্চ নাটকে।
কোথায় আছেন তাজিন আহমেদের মা। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেল, এই অভিনেত্রীর মা বর্তমানে গাজীপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। তাজিন আহমেদ মাঝে মধ্যে গিয়ে দেখে আসতেন। তারা খালা-মামারা আদাবরে থাকলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তাজিনের।
দাম্পত্য জীবনেও খুব একটা সুখী হতে পারেননি তাজিন। প্রথম জীবনে তাজিন আহমেদ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন নাট্য নির্মাতা এজাজ মুন্নাকে। বেশিদিন টেকেনি সেই সংসার। এরপর তিনি বিয়ে করেন মিউজিশিয়ান রুমি রহমানকে। এই সংসারেও হয়তো ঝামেলা ছিল। জীবন প্রদীপ নিভে যাবার আগে দ্বিতীয় স্বামীকেও পাশে পেলেন না তাজিন।
শেষ জীবনে পরিবার-পরিজন থেকে নিজেকে আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাজিন আহমেদ। প্রিয় আঙিনা অভিনয়ের সঙ্গেও ছিল দূরত্ব। অল্প কিছু প্রিয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও সেটা মুঠোফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল। বেশ নীরবে নিভৃতেই কেটেছে তার শেষ দিনগুলো। সেগুলো যে বিষাদময়, যাতনাময় ছিল তার প্রমাণ দেয় তাজিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো।
এই তো ফুুরিয়ে গেল স্বাদের জীবন! আর কোনো অনুভূতি জ্বলবে না, জ্বালাবে না! কাউকে প্রয়োজনও পড়বে না আর।

Found this article interesting? Follow Techtribune24 on Facebook, Twitter and LinkedIn to read more exclusive content we post.