ডায়াবেটিস আক্রান্তের রোজা রাখা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা তার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে পুষ্টিমান ঠিক রেখে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনলে ও শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামসহ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালালে ঝুঁকি অনেকটাই কমবে। রোজা পালনরত অবস্থায় পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে বা ইনসুলিন নিলে রোজার ক্ষতি হবে না।
সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘রোজা পালনরত অবস্থায় পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে বা ইনসুলিন নিলে রোজার ক্ষতি হবে না’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
সুস্বাস্থ্য বাংলাদেশের সহযোগিতায় ডিআরইউ এ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম খান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের মধ্যে ৩৬ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৯-১২ কোটি ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখছেন। ডায়াবেটিস টাইপ-১ ৪৩ শতাংশ ও টাইপ-২ রোগীর ৭৯ শতাংশ রমজান মাসে রোজা রাখছেন।’
তিনি আরও বলেন, মুসলমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বসম্মতভাবে মতামত দিয়েছেন, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রোজা রাখা ক্ষতিকর। কুরআন শরীফেও রোগীদের বিশেষ করে যাদের ঝুঁকি রয়েছে তাদের রোজার বিকল্প কিছু (মিসকিনকে খাওয়ানো) করে রেহাই দেয়া হয়েছে। এরপরও ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা তার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। রোজা রেখে কম-বেশি ঝুঁকি তৈরি করেন ডায়াবেটিস রোগীরা।’
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর ঝুঁকি সমূহ
খাদ্য গ্রহণে অনেকক্ষণ যাবত বিরতির কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) থাকে। এতোটাই কমতে থাকে যে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়। টাইপ-১ রোগীদের ক্ষেত্রে ৪.৭ গুণ ও টাইপ-২ রোগীদের ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে।
দ্বিতীয়ত, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বেড়েও যেতে পারে। এ ঝুঁকি টাইপ-১ এর ক্ষেত্রে বেশি। টাইপ-২ রোগীদের ক্ষেত্রেও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। রমজান মাসের শেষের দিকে এ প্রভাব পড়তে শুরু করে।
তৃতীয়ত, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বেড়ে যাওয়া বা এর ধারাবাহিকতায় অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হতে পারে।
চতুর্থত, দীর্ঘ সময় খাদ্য বিরতির কারণে পনি শূন্যতা ও থ্রম্বোঅ্যাম্বোলিজম দেখা দিতে পারে। গরম ও বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে এমনটি হয়।
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘যেসব রোগী মাথায় ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই রোজা রাখতে চান তাদের আগে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে রমজানের এক মাস আগেই পরামর্শ নিতে হবে। মানসিক প্রস্তুতি আরও তিন মাস আগে থেকে শুরু করতে হবে।’
রোজা রাখা অবস্থায় দিনে কমপক্ষে তিনবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। বিশেষ করে দিনের শেষভাগে রক্তের গ্লুকোজ দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইফতারে সহজেই হজম হয় এমন খাবার ও প্রচুর পানি খেতে হবে। সম্ভব হলে ফলের জুস। আর সেহরিতে জটিল শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে যা অনেকক্ষণ শরীরে সক্রিয় থাকে।
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামসহ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালালে ঝুঁকি কমবে। তবে বেশি ব্যায়াম না করাই ভাল। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এটা দেখা দিলে অবশ্যই গ্লুকোজ ও চিনিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টায় যারা একবার খান তাদের জন্য ইফতারের শুরুতেই, আর যারা একাধিক সময়ে খান তারা সেহেরির আধা ঘণ্টা আগে খাবেন।

Found this article interesting? Follow Techtribune24 on Facebook, Twitter and LinkedIn to read more exclusive content we post.