প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, বিদেশ ফেরতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব প্রবাসীদের আবারো সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দেশে অবস্থানকারীদের ঋণ সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

শুক্রবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী। 

তিনি বলেন, সরকার প্রবাসীদের পুনর্বাসন করতে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। করোনাকালে যারা দেশে ফিরে এসেছে তাদের তথ্যও সংরক্ষণ করছে সরকার। তবে ডাটাবেজ কেন্দ্রিক কিছু জটিলতার কারনে, এরমধ্যে ফেরত আসা প্রবাসীদের কত জন আবার কাজে ফিরেছেন সেই তথ্য সরকারের কাছে নেই। 

দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে যারা ফিরতে পারেনি, বয়স বা অন্যান্য অবস্থা বিবেচনায় ফিরতে চায়না, তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা্ করা হয়েছে। 

কিছু ব্যাপারে প্রক্রিয়াগত জটিলতা ছিল। তা এখন অনেকটাই নেই। এখন ফেরত প্রবাসীবা দেশে থাকলে ঋণ পাবে। আবার সেখানে যেতে চাইলে সহায়তা করা কবে। আমরা সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি। এবং বিশ্বের কোন দেশ আমাদের বলেনি তারা শ্রমিকের নেবে না। আটকা পড়া সৌদি প্রবাসীদের ৮০ শতাংশই সেই দেশে ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রসঙ্গে ইমরান আহমদ বলেন, আমরা কয়েক দফা মালয়েশিয়ার সাথে কথা বলেছি। এই বিভাগে নতুন মন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক একটি মিটিংও হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় আছে। যেগুলোতে আমরা ছাড় দিতে চাইনা। সেটা বিবেচনায় নিয়েই কাজ আগাচ্ছে। 

জার্ডানে বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা আমাদের থেকে ১২ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক নেবে। যাদের অধিকাংশই হবে নারী। জর্ডানের পোশাক কারখানা ক্লাসিক ফ্যাশন এই বিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী বছরের প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ সরকারি খরচে সেখানে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) লোক পাঠাবে।  

লেবাননে আটকে পড়া প্রবাসীদের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শুধু লেবানন নয় সারা বিশ্বের আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। ইতোমধ্যে বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। কেউ আমাদের কাছে সাহায্য চাইলে সরকার সহায়তা করবে। 

ঋণে আগ্রহ নেই দেশে ফেরত প্রবাসীদের

সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনাকালে এখন পর্যন্ত মোট ৪৪৩ জন বিদেশ ফেরত প্রবাসীকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। 

করোনাকালে নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ২০০কোটি টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৫০০কোটি টাকা মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। 

তবে প্রবাসীদের অনেকেই ঋণ নিতে আগ্রহী নয়। তারা দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ীতে যেতে যে আগ্রহ দেখায়, সেভাবে ঋণ নিতে সাড়া মিলছে না বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। 

পুনর্বাসন খাতে সহজ শর্তে বিদেশ ফেরত কিংবা বিদেশে মারা যাওয়া প্রবাসীর কোনো বৈধ প্রতিনিধিকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা ঋণ দেয়ার কথা। 

কিন্তু, এই ঋণ বিতরণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ছিল তাদের নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রথম দিকে বিশেষ কিছু শর্তের জালে আবদ্ধ ছিল প্রবাসী ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রথম দিকে ঋণ পাওয়ার শর্ত নিয়ে কিছু সংশয় ছিল। শাখা অফিসগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না, আরো কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলো আমরা দূর করেছি। এখন আশা করছি বিগত ৬ মাসে যা হয়েছে, আগামী ৬ মাসে তার কয়েকগুণ লোন নেয়ার পরিমাণ বাড়বে। 

এখন আর লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল নয় উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, শাখা বা স্থানীয় পর্যায়ে যাতে সিদ্ধান্ত দিয়ে ঋণ বিতরণ করতে পারে সে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যা আগে ছিল না। আগের চেয়ে লোন প্রদান প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে।


Found this article interesting? Follow Techtribune24 on Facebook, Twitter and LinkedIn to read more exclusive content we post.