আসন্ন ঈদে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এ সময় তারা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ, ১০ দিনের ছুটি ও বাড়ি ফিরতে গণপরিবহন চালুর দাবি জানান।

শনিবার (৪ মে) সকাল থেকে ভাষানটেক কাফরুল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় একত্র হয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এর আগে একই দাবি আদায়ে সকালে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় আন্দোলন শুরু করেন তারা।

শ্রমিকরা বলছেন, ঈদের আর মাত্র বাকি পাঁচ দিন। এখনও তারা বেতন-বোনাস পাননি। আর বেতন-বোনাস বন্ধের এক বা দু’দিন আগে দিলে ঈদের কেনাকাটাও সম্ভব হবে না তাদের জন্য।

ঈদের ছুটি তিন দিন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিকরা বলছেন, এত কম সময়ে বাড়ি গিয়ে ঈদ করে ফেরা সম্ভব নয়। তাই সেই ছুটি বাড়িয়ে ১০ দিন করা হোক। একই সঙ্গে গণপরিবহন চালু রাখার দাবি শ্রমিকদের।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া একাধিক শ্রমিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা ৩০টিরও অধিক গার্মেন্টস কর্মী এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তারা।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের এই অবস্থান কর্মসূচির কারণে মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে আটকে আছে সব ধরনের যানবাহন। কোনও যান চলাচল না করার কারণে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।

এ ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সকাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে রাজধানীর ভাষানটেক ও কাফরুল এলাকার বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্র হয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ করছেন।

ঈদে ১০ দিনের ছুটির দাবি জানিয়েছেন এসব শ্রমিক। আমরা সড়কে রয়েছি এবং তাদের অনুরোধ করেছি তারা যেন সড়ক ছেড়ে দেন।


ছেলেদের সঙ্গে ঈদ করতে চান বৃদ্ধাশ্রমের জহুরা আলতা বানু। বয়স ৭০ বছর। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। তার বিবাহিত জীবনে নিজের কোনো সন্তান নেই। স্বামী কতদিন আগে মারা গেছেন তা-ও বলতে চান না ক্ষোভে। কবে প্রায় ছয় বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন।

আলতা বানু জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর যা সম্পদ ছিল সবটুকু পালিত ছেলেকে লিখে দেন। এরপর থেকে পালিত ছেলে আর তার খোঁজখবর রাখেননি। ফলে বাধ্য হয়ে আসতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে।

জহুরা বেগম (৭৫) নামের আরেক বৃদ্ধা জানালেন, তিনি পাঁচ বছর ধরে মহানন্দা প্রবীণ নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। স্বামী ও ঘর-সংসার সবই ছিল তার। কিন্তু স্বামী এবং ছেলেদের অত্যাচারে তিনি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। স্বামী মারা যান দেড় বছর আগে। তারপরে ছেলেরা তার খোঁজ রাখেননি। শুধুমাত্র এক মেয়ে মাঝেমধ্যে এসে খবর নিয়ে যান।

তিনি অঝোরে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘ছেলেরা যদি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়, তবে আমি রোজার ঈদ তাদের সঙ্গে করতে চাই। তবে কেউ নিতে যায় না। বছরের পর বছর আশায় থাকি হয়তোবা কোনো সন্তান এসে নিয়ে যাবে। কিন্তু কেউ আসে না। তবে এখানে যারা দেখাশোনা করেন সবাই আন্তরিক।’

একই কথা শোনান স্বামীহারা আসমা (৬৫)। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। ছেলে মারা গেছেন অনেক আগে। আর মেয়ের বিয়ে হয় অন্যত্র। সে ঘরের নাতনি এসে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান দেড় বছর আগে। তখন থেকে তিনি এখানেই রয়েছেন।

সুফিয়া (৭০) নামের এক বৃদ্ধা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেহায়চর তার বাড়ি ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার কিছু দিন পরেই মারা যান তার স্বামী। এরপর হতেই তিনি ভাইদের বাড়িতেই থাকছিলেন। কিন্তু তার যেটুকু সম্পদ ছিল তার ভাইয়েরা লিখে নেয়ার পর রেখে গেছেন বৃদ্ধাশ্রমে।

আজাইপুর এলাকার কালু মণ্ডল (৭০) জানান, তিনি দুই বছর ধরে এই বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। তার একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে এবং ছেলে রয়েছে। ছেলে এবং স্ত্রী তার সব সম্পদ লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে তার ঠিকানা হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি বলেন, জমি লিখে দেয়ার পর থেকে তার ওপর অত্যাচার শুরু করেন ছেলে এবং স্ত্রী।

আলিনগরের বাসিন্দা এবু আলী (৮০) বলেন, ‘মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে শিশুকালের মতোই আমাদের সেবাযত্ন করা হয়। আমরা কোনো কিছুর অভাব বুঝতে পারি না। এখানে আমাদের সব কিছুর ব্যবস্থা রয়েছে। অসুখ হলে চিকিৎসকরা এসে চিকিৎসা দেন। মনে হচ্ছে নিজ বাড়ির চেয়ে অনেক ভালোই আছি এখানে।’

কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ (দক্ষিণ শহর) প্রবীণ নিবাসের (বৃদ্ধাশ্রম) ম্যানেজার আলিউর রেজা আলমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সমাজসেবার অনুমোদন নিয়ে জেলার ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগে সাড়ে তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় বৃদ্ধাশ্রমটি।

বর্তমানে এখানে ১২ জন নারী ও চারজন পুরুষ রয়েছেন। তাদের থাকার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ওয়ার্ড এবং আলাদা বিছানা। তাদের কাপড় থেকে শুরু করে খাবার যাবতীয় যা প্রয়োজন সব কিছু বহন করা হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে। তাদের রুটিন করে খাবার দেয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, বৃদ্ধাশ্রমটির দ্বিতীয় তলার কাজ চলছে। সে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু টাকা দেনা রয়েছে। কাজ শেষ হলে আরও অসহায় বৃদ্ধদেরও রাখা সম্ভব হবে। তার দাবি, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তা খুবই সামান্য। ওই বরাদ্দ দিয়ে কিছুই হয় না।


Found this article interesting? Follow Techtribune24 on Facebook, Twitter and LinkedIn to read more exclusive content we post.